ফরিদপুরের সদরপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মজিবুর রহমান নিক্সনের পক্ষে মিছিল হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য সদরপুর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স,
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদরপুর সরকারি কলেজ এলাকাসহ এক বর্গকিলোমিটার এলাকাব্যাপী ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পুলিশ ১৪৪ ধরার স্থলের চারপাশের সড়কে বেঞ্চ পেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাশের ভাঙ্গা উপজেলার নূরাল্লাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক সৈয়দ শাহীন আলম সাহাবুলের নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তির একটি মিছিল সাংসদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মিছিল করে সদরপুর উপজেলা সদরে আসে।
মিছিলকারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তার বেঞ্চের বেরিকেট ভেঙে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরের দিকে এগোতে থাকে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মিছিলটি বাধা দেন পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আল আমিনকে গালা;গালি করা ও হুম;কি দেয়া এবং চরভদ্রাসনের নারী ইউএনও জেসমিন সুলতানার সঙ্গে স্বতন্ত্র সাংসদ নিক্সনেরঅশোভন আচরণ করার প্রতিবাদে কাজী জাফরউল্লাহর সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা
নিক্সনের বিচার দাবি করে উপজেলা পরিষদের সামনে শনিবার বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন কর্মসূচির আহ্বান করে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা ইউএনও পূরবী গোলদারের কাছ থেকে এ কর্মসূচি পালন করার জন্য লিখিত আবেদন করেন।
অপরদিকে সাংসদ নিক্সন সমর্থিত অপর অংশ নিক্সনের ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একই সময় একই স্থানে পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করে। নিক্সনের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এ কর্মসূচি পালনের জন্য আবেদন করেন গত শুক্রবার দুপুরে।
একই সময়ে একই জায়গায় পরস্পরবিরোধী দুটি কর্মসূচির কারণে সদরপুরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে শনিবার সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী গোলদার বলেন, দুটি পরস্পরবিরোধী কর্মসূচির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বিধায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
সকাল থেকে দুই পক্ষের সমর্থকরা তাদের কর্মসূচি পালন করার জন্য উপজেলা পরিষদের সামনে জড়ো হতে থাকে। পরে পুলিশ তাদের ওই জায়গা থেকে হটিয়ে দেয়।
সাংসদ নিক্সন সমর্থিত সদরপুরের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর বি;;রুদ্ধে চরম মিথ্যাচার ও মামলা দায়েরের প্রতিবাদে শনিবার সকালে এক
সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করতে পারিনি।
গত ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে অশোভন বক্তব্য রাখেন এবং চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
ওই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম বাদী হয়ে সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চরভদ্রাসন থানায় একটি মামলা করেন।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন এ তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন। এ আসনের আগে সাংসদ ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ।
২০১৪ ও ২০১৮ সালে পর পর দুই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিক্সন কাজী জাফরউল্লাহকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহকে পরাজিত করে নিক্সন সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর এ তিনটি উপজেলা আওয়ামী লীগ কাজী জাফরউল্লাহ ও নিক্সন এই দুজনের নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।
নিক্সনবিরোধী কাজী জাফরউল্লাহ সমর্থিত অংশের উপজেলা পর্যায়ের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফকির আব্দুস সাত্তার বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর
গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক সদরপুরে শনিবার সকালে বিক্ষোভ
সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় আমরা নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করা থেকে বিরত থাকি।